Posts

তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি 3

Image
  সৃতি তাকালো জানালার দিকে। হঠাৎ কুয়াশার মতো এক অবয়ব বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। সৃতি জানালার কাছে এসে দাঁড়াল—দেখে ভাবল, তার দেখা কি ভুল ছিল? নাকি কিছু একটা তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইছিল? ঠিক তখনই জঙ্গলের দিক থেকে কেউ একজন বেরিয়ে এল। সৃতি দূরে ছিল, তাই মুখটা স্পষ্ট দেখতে পায়নি, কিন্তু কেন যেন মনে হল—ওর পরিচিত কেউ! স্রেফ চোখের দেখাতেই সৃতির মাথা ঝিম ধরে গেল। সে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। এদিকে স্রাবণ ব্যস্ত ছিল নিজের ব্যবসার কাজে। রাস্তা বন্ধ থাকায় রাতটা তাকে এক হোটেলে কাটাতে হল। মাঝরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়ার সময়, হঠাৎ তার চোখে পড়ল এক ছেলেকে, রাস্তায় ঠান্ডায় কুঁকড়ে শুয়ে আছে। স্রাবণ ভাবল, ছেলেটার কত কষ্টই না হচ্ছে। সে নিচে নেমে এল, রুম থেকে একটা কম্বল নিয়ে ছেলেটার কাছে গেল। যেই সে কাছে গেল, ছেলেটা উঠে বসলো। তার চোখে তাকাতেই স্রাবণের চোখে পানি চলে এল। স্রাবণ কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল আর বলল, “কোথায় ছিলি তুই? আমরা সবাই তোকে কত খুঁজেছি! কোথায় ছিলি রে?” কিন্তু ছেলেটি কিছুই বলল না। হঠাৎ স্রাবণ টের পেল, ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে গেছে, কিন্তু...

"তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি" 2

Image
 পলকের দাদার এক ছেলে আর এক মেয়ে। পলকের বাবা ও তার এক বোনও আছেন। সেই বোনের একটি মেয়ে আছে, নাম তুনি । পলকের ফুপির ইচ্ছা—তুনি আর পলকের বিয়ে হোক। কিন্তু পলক সেটা চায় না। সে চায় না শুধু ফ্যামিলির চাপেই জীবন কাটাতে। তাছাড়া, সে তো কারও জন্য মন উজাড় করে দিয়েছে। পলক এখন তাদের পরিবারে একজন দায়িত্ববান মানুষ। সবাই তাকে সম্মান করে, তার কথার গুরুত্বও অনেক বেশি। একদিন পলক তার দাদাকে বলল, "আমি একজন মেয়েকে অনেক ভালোবাসি।" তার দাদা একটু চমকে উঠলেও মুচকি হেসে বললেন, "আলহামদুলিল্লাহ! ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটাই প্রাধান্য পাবে।" পলক তখন নিজের ফোন বের করে সৃতির একটা ছবি দেখাল দাদাকে। ছবিটা দেখে দাদা অবাক হয়ে বললেন, "এ যেনো পরির মতো দেখতে! তোমার সঙ্গে খুব মানাবে।" পলক হেসে বলল, "আমি আগামীকাল ওর বাসায় যাবো, কথা বলবো ওর পরিবারে। আমি সৃতি কে পুরোপুরি আমার জীবনের অংশ করতে চাই।" দাদা বললেন, "তাহলে এখনই যাও রেস্ট নাও, কাল তোমার বিশেষ দিন।" রুমে ফিরে পলক আর অপেক্ষা করতে পারল না। সে সঙ্গে সঙ্গে সৃতিকে কল দিল। কল রিসিভ হতেই বলল: "সোনা, আমি আসছি। আগ...

"তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি"

Image
রাতের আকাশটা আজ অনেক বেশি অন্ধকার। চাঁদ নেই। বাতাসে এক অদ্ভুত নীরবতা। স্মৃতি বারান্দায় বসে আছে একা, হঠাৎ মনে পড়ল পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা। বিদ্যুৎ চলে গেছে। ঘরটা আরও অন্ধকার হয়ে গেল। স্মৃতি জানে— কোথাও একটা মোমবাতি রাখা আছে। এই ভাবনায় ডুবে থাকার সময় হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা রাখা ছিল বিছানার পাশে। স্মৃতি এগিয়ে গিয়ে রিসিভ করল। — "হ্যালো?" ওপাশে কোনো কথা নেই, শুধু এক নিঃশ্বাসের শব্দ। স্মৃতির গা শিউরে উঠল। মনে হল, এ শব্দ চেনা কারও। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ওপাশ থেকে ভেসে এল, — "সোনা…" স্মৃতির বুক ধড়াস করে উঠল। চোখের সামনে যেন ছায়ার মতো ভেসে উঠল এক পুরোনো মুখ। অনেক দিন আগের কথা… স্মৃতি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওদের পরিবারে একটাই মেয়ে সে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসত। ওর ভাই শ্রাবণ, সবসময় খুনসুটিতে ব্যস্ত। শ্রাবণের বন্ধু ছিল পলক। পলক মাঝেমধ্যেই ওদের বাড়ি আসত। স্মৃতি ছোট হলেও ওর মনে একটা নরম অনুভূতি জন্ম নিচ্ছিল পলকের জন্য। পলকের নিজের পরিবারে সবসময় ঝগড়া হতো। তাই যখন সে শ্রাবণের বাড়ি আসত, ওদের পারিবারিক ভালোবাসা দেখে এক ধরনের শান্তি পেত। পলক তখন ভার্সিটিতে পড়ে। আর স...

“দিয়া"

Image
 গল্প: দিয়া — ছায়ার ভেতর আলো দিয়া — একটি নাম, একটি প্রাণ। একটি ছোট্ট মুখ, বড় বড় চোখ, আর মনে যেন এক অজানা গহ্বর। তার জন্ম এক দীর্ঘ অপেক্ষার পরে। বাবা-মায়ের ভালোবাসার ফল হলেও, সেই ভালোবাসা বেশিদিন থাকেনি তার জীবনে। মাত্র চার বছর বয়সে, দিয়া তার বাবাকে হারায়। সে বুঝতে পারেনি তখন ঠিক কী হারালো — শুধু অনুভব করেছিল, তার ছোট্ট জগতে একটা বড় ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। মা, তানিয়া বেগম, সবটুকু দিয়ে দিয়াকে মানুষ করতে থাকেন। কিন্তু দিয়া ছিল একটু আলাদা। সে কখনো খেলে না অন্য বাচ্চাদের মতো, হাসে না সবসময়। তার দৃষ্টি অনেক গভীর, যেন অতীত খুঁজে বেড়ায়। একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দিয়া বলল, "মা, আমার আগেও একটা মা ছিল… তার চোখ তোমার মতো ছিল না।" তানিয়া কিছু বলতে পারেন না। বুকের মধ্যে কেমন যেন কাঁপন ধরে। কিছুদিন পর, দিয়া ছবি আঁকতে শুরু করে। সে আঁকে একটা পুরনো বাড়ি, একটা পুকুর, আর একটা মেয়ে — কপালে লাল টিপ, লাল শাড়ি। অথচ দিয়া তো কখনো এমন কিছু দেখেনি। তানিয়া জানতে চায় — "দিয়া, এসব কোথা থেকে শিখলে?" দিয়া উত্তর দেয় না। শুধু বলে, "আমি মনে করতে পারি... একটু এ...

অদেখা সেই ছোঁয়া

Image
শাফা, আশলগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে পড়াশোনার জন্য। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে পার্ট-টাইম জব করে। কিন্তু থাকার জন্য উপযুক্ত রুম খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট হয়। শেষে সে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। কয়েকদিন পর তাদের বন্ধুরা মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে। একজন বলে সমুদ্র, আরেকজন পাহাড়—কিন্তু শাফা বলে সে জঙ্গল আর পাহাড়ের পাশে ক্যাম্প করতে চায়। তারা এক পাহাড়ি এলাকায় যায়, পাহাড়ের পেছনে গভীর জঙ্গল। সবাই মিলে আগুন জ্বালায়, গান গায়, গল্প করে। সেই রাতে শাফার মন খুব ভালো ছিল। রাত গভীর হলে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু শাফার ঘুম আসে না। সে শুয়ে ভাবতে থাকে—সবাইর জীবনে কেউ না কেউ থাকে, তার জীবনে কেউ আসবে তো? তখনই হঠাৎ, অন্ধকারে একটা ঠান্ডা হাত এসে তার হাত ছুঁয়ে দেয়। গা ছমছমে লাগলেও, কোনো ভয় কাজ করে না। বরং একটা শান্তি অনুভব হয়। সে উঠে বসে, ফোনের আলো জ্বালে, কিন্তু চারপাশে কিছুই দেখতে পায় না। তখন আবার সেই ঠান্ডা হাত তার হাত চেপে ধরে, আর সেইসাথে এক মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো তাবুর ভেতরে। সেই গন্ধে শাফা যেন ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত নেশার মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে। তিনদিন কাটে ক্যাম্পে,...

চিঠিটা যাকে পাঠানো হয়নি – এক ভৌতিক প্রেমের গল্প

Image
 পুরনো বাড়িতে ফিরে আসা এক নারীর সামনে খুলে যায় প্রেম ও মৃত্যুর ভয়ানক রহস্য। অর্ণবের অসমাপ্ত চিঠি কি তার উত্তর দেবে, নাকি ডেকে আনবে এক অদ্ভুত পরিণতি? সায়ন্তিকা যখন পুরানো বাড়িটায় ফিরে আসে, তখন শহরটা ঘুমিয়ে ছিল। দশ বছর আগে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল তারা, এক দুর্ঘটনার পর। তার প্রেমিক, অর্ণব, সেদিন রাতে ফিরে আসেনি আর কখনো। বাড়ির ঘরে ঢুকতেই সায়ন্তিকার চোখে পড়ল সেই পুরনো ডেস্কটা। ধুলো ঢাকা, কিন্তু drawer-টা অদ্ভুতভাবে অল্প খোলা। খুলে দেখল একটুকরো কাগজ—একটি অসমাপ্ত চিঠি। "‘সায়ন্তিকা, আমি জানি তুমি অপেক্ষা করছ। কিন্তু আজ রাতে যদি আমি ফিরতে না পারি, তাহলে জেনে নিও আমি...’” চিঠিটা শেষ হয়নি। কিন্তু সেই মুহূর্তে হাওয়ার দোল, হঠাৎ নিভে যাওয়া বাতি, আর জানালার বাইরে এক জোড়া চোখ—সব মিলিয়ে যেন সময় থমকে গেল। সায়ন্তিকার চোখ ছলছল করে উঠল। হঠাৎ এক কণ্ঠস্বর—"তুমি এখনও অপেক্ষা করছ?" সে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অন্ধকার ছায়ামূর্তি—চেনা মুখ, অর্ণব! কিন্তু তার চোখে প্রাণ নেই, আর ঠোঁটে সেই চিরচেনা হাসি...

ছায়ার কলম পর্ব ৪

Image
যার নাম উচ্চারণেই দরজা খুলে যায় ... স্মৃতি রাতে আর ঘুমাতে পারেনি। খাতা, আয়না, জানালা — সবকিছু যেন তাকে ঘিরে ফেলেছে। সে টেবিলে বসে খাতার পেছনের পাতাগুলো উল্টে দেখে, তাতে প্রতিদিন সে যা লিখেছে — সব অদৃশ্য! শুধু একটা নাম বারবার জ্বলজ্বল করছে — “ঈশান...” ❝সে কখনও এই নাম লেখেনি।❞ ❝এই নাম সে চেনেও না।❞ ঘরের বাতি নিভে গেল হঠাৎ। দেয়াল ঘেঁষে কেউ ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে — পায়ের ছায়া দেখা যাচ্ছে কেবল। সে ঠকঠক করে উঠে জানালার কাছে যায়, পর্দা সরায়… সামনে দেখা যায় — একটা ছেলেকে, মাটিতে বসে সে লিখছে। কিন্তু তার হাতে কোনো খাতা নেই — সে লিখছে বাতাসে , আর প্রতিটা অদৃশ্য শব্দ এসে স্মৃতির খাতায় বসে যাচ্ছে। সে তাকায় — ছেলেটির গা নেই, মুখ নেই — কেবল একজোড়া জ্বলন্ত চোখ, আর কাঁধের ওপরে ঝুলে থাকা চুল। তার কণ্ঠস্বর এবার স্পষ্ট : "তুমি যখন প্রথমবার কলম ধরেছিলে, তখন আমি শ্বাস ফেলেছিলাম। এখন তুমি প্রতিবার লিখলে, আমি এক পা এগিয়ে আসি। আর মাত্র তিনটি বাক্য... তারপর আমরা এক হবো।" স্মৃতি কাঁপা হাতে খাতায় লেখে: ❝“আমি কি তোমাকে সৃষ্টি করেছি?”❞ সেই মুহূর্তে দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে যায়… আর জানালার বাইরে গাছের ফাঁকে...