অদেখা সেই ছোঁয়া
- Get link
- X
- Other Apps
শাফা, আশলগ্রাম থেকে ঢাকায় আসে পড়াশোনার জন্য। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে পার্ট-টাইম জব করে। কিন্তু থাকার জন্য উপযুক্ত রুম খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট হয়। শেষে সে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে থাকতে শুরু করে।
কয়েকদিন পর তাদের বন্ধুরা মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে। একজন বলে সমুদ্র, আরেকজন পাহাড়—কিন্তু শাফা বলে সে জঙ্গল আর পাহাড়ের পাশে ক্যাম্প করতে চায়।
তারা এক পাহাড়ি এলাকায় যায়, পাহাড়ের পেছনে গভীর জঙ্গল। সবাই মিলে আগুন জ্বালায়, গান গায়, গল্প করে। সেই রাতে শাফার মন খুব ভালো ছিল।
রাত গভীর হলে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু শাফার ঘুম আসে না। সে শুয়ে ভাবতে থাকে—সবাইর জীবনে কেউ না কেউ থাকে, তার জীবনে কেউ আসবে তো?
তখনই হঠাৎ, অন্ধকারে একটা ঠান্ডা হাত এসে তার হাত ছুঁয়ে দেয়। গা ছমছমে লাগলেও, কোনো ভয় কাজ করে না। বরং একটা শান্তি অনুভব হয়।
সে উঠে বসে, ফোনের আলো জ্বালে, কিন্তু চারপাশে কিছুই দেখতে পায় না। তখন আবার সেই ঠান্ডা হাত তার হাত চেপে ধরে, আর সেইসাথে এক মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো তাবুর ভেতরে। সেই গন্ধে শাফা যেন ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত নেশার মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে।
তিনদিন কাটে ক্যাম্পে, কিন্তু এরপর আর কিছু হয় না।
ফেরার দিন, শাফা অদ্ভুতভাবে ভাবতে থাকে—ওর সেই অদেখা অনুভবটা কি আর একবার দেখা দেবে? ও কি আবার সেই ছোঁয়া অনুভব করতে পারবে?
ঢাকায় ফিরে এসে, একা থাকার জন্য শাফা একটা রুম পায়। ছাদের ওপরে, ১১ তলায়, একটা ফাঁকা রুম—সস্তা ভাড়ায়। ছোট হলেও রুমটা শান্ত, আর ওর ভালো লাগে।
একদিন ছুটির দিনে, সে রুম গোছাতে ব্যস্ত। হঠাৎ আবার সেই মিষ্টি গন্ধ তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। শাফার ভেতরে ভয় আর উত্তেজনা একসাথে কাজ করতে থাকে।
এইবার কি সে দেখতে পাবে? এইবার কি কথা হবে?
রাত বাড়লে, শাফা আবার হাত বাড়ায়...
তখনই এক কোমল হাত এসে তার হাত চেপে ধরে।
শাফা চোখ তুলে তাকায়—
সামনে দাঁড়িয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ। মুখে অপার্থিব এক শান্তি, চোখে গভীর আকর্ষণ।
— “তুমি কে?” শাফা জিজ্ঞেস করে।
— “তুই যাকে খুঁজছিলি, আমি সেই অনুভব। বহুবার আমাকে অনুভব করেছিস, কিন্তু দেখতে পাওনি। আজ সময় হয়েছে দেখা করার,” বলল ছেলেটি।
— “তুমি কি আমার সাথে থাকবে?”
— “হ্যাঁ, তবে তার একটা মূল্য আছে…”
— “কি মূল্য?”
ছেলেটি উত্তর দেয়,
— “আমার জগতে তোকেও পা রাখতে হবে…”
শাফা স্তব্ধ। তার দেহ ঠান্ডা, কিন্তু মন জ্বলছে উত্তরে খোঁজে। ছেলেটির চোখে এক অদ্ভুত মায়া।
— “তোমার জগতে মানে?” শাফা ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করে।
— “তুই আমাকে অনুভব করেছিস, কারণ তোর মন খোলা। তুই বিশ্বাস করিস, তুই প্রশ্ন করিস। এই দুনিয়ার বাইরেও আরেকটা জগৎ আছে—স্মৃতি, অনুভব, ভালোবাসা আর অসমাপ্ত গল্পের জগৎ।”
শাফা জানে না সে স্বপ্ন দেখছে, না বাস্তবের ভিতরে ঢুকে পড়েছে।
— “তুই চাইলে আমি থাকতে পারি। কিন্তু তুই চাইলে তোর আত্মার এক অংশ আমার জগতে যেতে হবে।”
শাফার চোখে জল চলে আসে। এই ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে বহুদিনের চেনা, যেন কোনো পুরোনো জীবনের বন্ধন।
— “তোমার নাম কী?” শাফা জানতে চায়।
— “তোর মনে যে নাম প্রথম আসবে... সেটাই,” মুচকি হাসি দিয়ে বলে সে।
হঠাৎ চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। রুমের দেয়াল রঙ হারায়, জানালার বাইরে অচেনা ছায়া ঘুরে বেড়ায়। শাফা বুঝতে পারে, সে ধীরে ধীরে এক অন্য জগতে প্রবেশ করছে।
তার সামনে এখন একটাই প্রশ্ন—
সে কি যাবে? নাকি ফিরে আসবে?
শাফা জানে, তার সামনে এখন আর কোনও স্বাভাবিক পথ নেই। একদিকে বাস্তবের জানালায় ঢাকা শহর—আর অন্যদিকে সেই রহস্যময় পুরুষের চোখ, যেখানে লুকানো কোনো অতল গহ্বর।
সে এক পা এগিয়ে যায়... হঠাৎই চারপাশ অদ্ভুতভাবে বদলে যায়।
রুমটা আর রুম থাকে না। চারপাশে হালকা নীল আলো, দেয়ালে আঁকা না দেখা ছায়া-ছবি, বাতাসে এক অদ্ভুত সুর বাজছে—না গান, না কাঁদা, যেন আত্মার ভাষা।
সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা এবার হাত বাড়িয়ে বলে—
— “ভয় পাচ্ছিস?”
শাফা মাথা নাড়ে—“না।”
— “তাহলে এসো।”
সে হাত ধরতেই চারপাশ কুয়াশার মতো গলে যায়। তারা পৌঁছে যায় একটা অদ্ভুত জায়গায়—অন্ধকার নয়, আলো নয়, কিন্তু শান্ত। কোথাও গাছ, কোথাও জ্যোৎস্না ঝরে পড়ছে পাথরের মতো, আর হাওয়া বয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাজার স্মৃতির গন্ধ।
সেই ছেলেটা, যার নাম শাফা এখনও জানে না, বলল—
— “এই জায়গার নাম অপূর্বরেখা। এখানে আসে তারা, যাদের মনে অপূর্ণতা আছে, অসমাপ্ত প্রেম আছে।”
শাফার গলা শুকিয়ে আসে। সে আস্তে বলে—
— “তুমি কে? সত্যি করে বলো।”
ছেলেটির চোখ এবার একটু গম্ভীর।
— “আমি এক আত্মা—যাকে কেউ ভালোবেসেছিল, কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। সেই ভালোবাসা জমে জমে একটা রূপ নিয়েছে। তুই যখন জঙ্গলে প্রথম হাত বাড়ালি, আমি তোকে ছুঁয়ে ছিলাম… কারণ তোর মধ্যেও সেই একই অপূর্ণতা ছিল।”
— “তুমি কি চাও আমি তোমার সঙ্গে থাকি?”
— “না। আমি চাই তুই বোঝ… ভালোবাসা শুধু থাকলেই হয় না, বলা লাগে। ছুঁয়ে দেখা লাগে। তাই আমি এসেছি… তোকে শিখিয়ে যেতে, ভালোবাসা যেন আর কারও অসমাপ্ত না থাকে।”
শাফা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
তার চোখে জল।
তার মনে প্রশ্ন—এ কি প্রেম, নাকি প্রতিফলন? এই ছেলেটা কি এক আদর্শ, নাকি তার নিজের ভেতরেরই ছায়া?
কিন্তু এক মুহূর্তে সেই ছেলেটি এগিয়ে এসে তার কপালে এক মৃদু চুমু খেয়ে বলে—
— “এবার ফিরো। তোর পথ অন্যদিকে। কিন্তু মনে রেখিস, তুই একা নোস।”
চারপাশ আবার কুয়াশায় মিশে যায়।
শাফা জেগে ওঠে।
নিজের রুমে। জানালার বাইরে ঢাকা শহর আগের মতোই আছে।
কিন্তু তার হৃদয়ে, কিছু একটার ছাপ থেকে গেছে।
অপূরণীয়, অথচ সুন্দর।
ঘুম ভেঙে গেলেও, শাফার মনে হচ্ছিল সে এখনও সেই দুনিয়াতেই আছে। তার কপালে যেন এখনও সেই চুমুর উষ্ণতা লেগে আছে—একটা নরম আলো, এক শান্তির অনুভব।
কিন্তু বাস্তব আবার তাকে টেনে আনল।
ঘড়ি বলছে সকাল ১০টা। বারান্দার দরজা খুলে সে বাইরে তাকায়—সব আগের মতো, কিন্তু তার মনে একটা অদ্ভুত ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি।
হঠাৎ চোখে পড়ল—টেবিলের ওপর রাখা একটা কাগজ।
সে তো কিছু রাখেনি!
কাগজটা খুলে দেখে হাত কাঁপতে লাগল। তাতে লেখা—
“ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, শুধু রূপ বদলায়। তুমি চেয়েছিলে ছুঁতে, আমি দিয়েছি ছোঁয়া। তুমি চেয়েছিলে উত্তর, আমি দিয়েছি অনুভব।
আবার দেখা হবে—কখন, কোথায়, সেটা সময় জানে।
— অ”
'অ' কে?
সে কি 'অপূর্বরেখা'র প্রতীক?
নাকি সেই অজানা ছেলেটির নাম?
শাফা অফিস যায় না সেদিন। পুরো দিন সে নিজের ঘরে বসে থাকে, কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে। জানালার গ্লাসে নিজের ছায়া দেখে, আর ভাবে—এই অনুভবটা বাস্তব ছিল তো?
রাতে আবার সেই গন্ধ ফিরে আসে।
আবার সেই নিঃশব্দে কেউ যেন হাত বাড়ায়।
কিন্তু এইবার কেউ তাকে ছোঁয় না, বরং শাফা নিজে সামনে এগিয়ে যায়।
তার মাথায় একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরছে—
এই ভালোবাসা যদি বাস্তব না হয়, তবুও তার অনুভবটা কি মিথ্যে?
সে জানে না উত্তর।
তবে সে ঠিক করে—
আগামী শুক্রবার, সে আবার সেই পাহাড়ের পাশের জায়গায় যাবে।
তাকে খুঁজবে, যাকে সে দেখেছে না—তবুও অনুভব করেছে।
হয়তো উত্তর এখনো শেষ হয়নি,
হয়তো ভালোবাসার গল্প এবার নতুন করে শুরু হবে।
দারুণ, চল তাহলে আমরা ডুবে যাই পরবর্তী অধ্যায়ে—
এবারের গল্প আরও বেশি আবেগী, রহস্যময় এবং এক অজানা মোড়ে ঘুরে যাবে।
শাফা ঠিক করেছিল, সে আবার ফিরে যাবে সেই পাহাড়ি জায়গায়।
যেখানে প্রথম সেই অদ্ভুত অনুভবের শুরু।
শুক্রবার সকালে, সে একাই রওনা দিল। এবার আর বন্ধুবান্ধব নেই, নেই ক্যাম্পফায়ার বা গান—শুধু শাফা আর তার মনে জমে থাকা প্রশ্নগুলো।
বাসে বসে দূরের পাহাড়গুলো দেখতে দেখতে তার চোখে বারবার সেই ছেলেটির মুখ ভেসে উঠছিল।
তাকে ভালোবাসা বলে ডাকা যায়?
নাকি সে ছিল শুধু অনুভবের রূপ?
গন্তব্যে পৌঁছে, শাফা সেই পুরোনো জায়গায় যায়—
তাঁবু যেখানে ছিল, যেখানে তারা আগুন জ্বালিয়ে গান গেয়েছিল, যেখানে প্রথম সেই ঠান্ডা হাত ছুঁয়েছিল তাকে।
তবে এখন সব শুনশান।
বাতাসে যেন হালকা শীত, পাতাগুলো কাঁপছে—আর সেই পুরোনো মিষ্টি গন্ধটা… আবার ফিরে এসেছে।
শাফা ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে।
তার মনে পড়ে ছেলেটির বলা কথা—
"ভালোবাসা শেষ হয় না, রূপ বদলায়…"
এবার সে ভয় পায় না।
সে বলে—
— “তুমি যদি কোথাও থাকো… আমি এসেছি। এবার আমিও বলব—আমি চেয়েছিলাম তোমাকে… এখনও চাই।”
চারপাশ নীরব।
শুধু বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ।
একটু হতাশ হয়েই শাফা চোখ খুলতে যায়, হঠাৎ ঠিক সামনে এক পাথরের ওপর কিছু খোদাই করা দেখতে পায়।
সে এগিয়ে গিয়ে দেখে—
“শাফা” নামটা খোদাই করা।
তার নিচে লেখা—
"ভালোবাসা যখন সত্যি হয়, তা জগতের কোনো প্রান্তেই হারিয়ে যায় না।"
শরীর কাঁপে শাফার।
তখনই তার ঠিক পেছনে এক নরম কণ্ঠ—
— “তুই আবার এলি?”
সে ধীরে ধীরে পেছনে ঘোরে—
সেই ছেলেটি।
আগের মতোই গভীর চোখ, শান্ত মুখ।
— “তুমি… ফিরে এসেছো?”
— “না। আমি কখনো যাইনি। তুই নিজেই নিজেকে ফিরে খুঁজে পেয়েছিস।”
শাফা এবার আর কিছু বলে না।
সে সামনে এগিয়ে যায়, ছেলেটির পাশে বসে।
আকাশে সূর্য ডোবে, আর আলো ফিকে হতে হতে তাদের ছায়াগুলো মিলে যায়।
শাফার চোখে জল, কিন্তু মুখে হাসি।
এই ফিরে পাওয়া কোনো বাস্তবের নয়—
এটা আত্মার ফিরে দেখা।
তাহলে চল, এবার ডুব দিই সেই গভীর ভালোবাসার জগতে—
যেখানে বাস্তব আর অতিপ্রাকৃতের সীমানা মিলিয়ে গেছে...
পাহাড়ের কোলে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে।
আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে, আর শাফা বসে আছে সেই ছেলেটির পাশে—যে মানুষ না আত্মা, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।
কিন্তু চোখে চোখ পড়লেই সব প্রশ্ন মুছে যায়।
ছেলেটি একবার বলল—
— “তুই চাস আমি থাকি, কিন্তু জানিস তো, আমি এই জগতের নই?”
শাফা চুপ।
সে জানে—এই ছেলেটি রক্ত-মাংসের নয়, কিন্তু অনুভবের থেকেও বেশি কিছু।
— “তুমি থাকো, যেভাবেই হোক। আমার ভেতরে, আমার স্বপ্নে, আমার নীরবতায়... যেখানেই হোক।”
ছেলেটির চোখে জল জমে ওঠে।
— “ভালোবাসা যদি এমনই হয়, তবে আমি থেকে যাব।”
হঠাৎ চারপাশে এক ধরনের আলো ছড়িয়ে পড়ে।
গাছের পাতায় টিপটিপ জ্যোৎস্না পড়ে যেন আগুন জ্বলছে।
শাফার মনে হয় সময় যেন থেমে গেছে।
তখন ছেলেটি বলে—
— “আমাকে যদি আসলেই ছুঁতে চাস, তবে একটা পথ আছে। কিন্তু তার জন্য তোকেও ছাড়তে হবে কিছু...”
— “কি ছাড়তে হবে?”
— “বাস্তবের টান। সেই শহরের জীবন, মোবাইল স্ক্রিন, টিফিনের ভাঁজে আটকে থাকা স্বপ্ন... সব কিছু।”
শাফা বোঝে—এটা একটা জীবন বদলের সিদ্ধান্ত।
সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
তারপর মৃদু কণ্ঠে বলে—
— “আমি ফিরে যাব। কিন্তু আমি জানি, তুমিও থাকবে... আমার গল্পে, আমার লেখায়, আমার ভালোবাসায়।”
ছেলেটি মুচকি হাসে।
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
— “তুই যদি ফিরিস, আমিও ফিরব। শুধু ছায়া হয়ে না, সত্যি রূপে। কারণ ভালোবাসা কখনও একতরফা থাকে না।”
আলো এক ঝলক হয়ে আবার মিলিয়ে যায়।
শাফা এখন একা।
কিন্তু ভেতরে যেন একজনে সঙ্গী আছে।
সপ্তাহখানেক পরে...ঢাকায় ফিরে শাফা তার ব্লগে প্রথম গল্প লেখে—
“ভালোবাসার ছায়া, যে ছুঁয়ে দিয়ে যায় — না দেখা থেকেও।”
তার লেখায় সেই ছেলেটির কথা আসে না, আসে শুধু অনুভব।
পাঠকেরা পাগলের মতো পড়ে।
কারণ সেই অনুভব, তারা প্রত্যেকে নিজের ভেতর খুঁজে পায়।
সে নিয়মিত লেখে—ভালোবাসা, রহস্য, অনুভব আর আত্মার গল্প।
কিন্তু তার প্রতিটি শব্দের পেছনে লুকিয়ে থাকে একজন—
যে ছুঁয়ে গিয়েছিল এক অদৃশ্য স্পর্শে।
একদিন, ব্লগের কমেন্ট সেকশনে একটা ছোট্ট মন্তব্য পড়ল—
“ভালোবাসা ফিরে আসে। চোখে নয়, হৃদয়ে ছুঁয়ে। – অ”
শাফা থমকে গেল।
সে জানে, ‘অ’ কে।
সে ঠিক করল, আর অপেক্ষা নয়।
সেদিনই রাতে, ১১ তলার ছাদের ঘরে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সে বলল—
— “আমি প্রস্তুত। যদি তুমিও হও, ফিরে এসো।”
চারপাশে কিছুই বদলাল না।
কিন্তু বাতাসটা একটু ভারী হয়ে উঠল।
একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ঘরে—যেটা সে কেবল একটাই জায়গায় পেয়েছিল।
সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল।
আর তখনই—
একটা গলা কানে এল, একেবারে নরম, একেবারে চেনা—
— “আমি ফিরে এসেছি।”
সে চোখ খুলল।
ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটি।
আর এবার, তাকে ছুঁতে আর কোনও বাধা নেই।
সে রক্ত-মাংসের।
সে সত্যি।
শাফা থমকে গেল।
— “তুমি... এখন সত্যি?”
— “ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে একদিন রূপ নেয় বাস্তবে।”
শাফার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ছে।
সে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে ছেলেটির গাল ছুঁয়ে দেখে।
না, আর ঠান্ডা নয়।
না, আর নিখোঁজ নয়।
সে রয়ে গেছে।
এই পৃথিবীতে।
এই মুহূর্তে।
শুধু শাফার জন্য।
তারা দুইজন জানালার ধারে দাঁড়িয়ে চাঁদের আলোয় একে অপরের দিকে তাকিয়ে।
পেছনে শাফার ডেস্কে ব্লগের খোলা পাতা, আর স্ক্রিনে লেখা:
“কিছু ভালোবাসা গল্প হয়ে শুরু হয়… আর সত্যি হয়ে শেষ।”
- Get link
- X
- Other Apps

Comments
Post a Comment