"তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি"


রাতের আকাশটা আজ অনেক বেশি অন্ধকার।
চাঁদ নেই। বাতাসে এক অদ্ভুত নীরবতা।
স্মৃতি বারান্দায় বসে আছে একা, হঠাৎ মনে পড়ল পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা।

বিদ্যুৎ চলে গেছে। ঘরটা আরও অন্ধকার হয়ে গেল।
স্মৃতি জানে— কোথাও একটা মোমবাতি রাখা আছে।
এই ভাবনায় ডুবে থাকার সময় হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল।
ফোনটা রাখা ছিল বিছানার পাশে।
স্মৃতি এগিয়ে গিয়ে রিসিভ করল।

"হ্যালো?"

ওপাশে কোনো কথা নেই, শুধু এক নিঃশ্বাসের শব্দ।
স্মৃতির গা শিউরে উঠল। মনে হল, এ শব্দ চেনা কারও।

বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ওপাশ থেকে ভেসে এল,
"সোনা…"

স্মৃতির বুক ধড়াস করে উঠল।
চোখের সামনে যেন ছায়ার মতো ভেসে উঠল এক পুরোনো মুখ।


অনেক দিন আগের কথা…

স্মৃতি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে।
ওদের পরিবারে একটাই মেয়ে সে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসত।
ওর ভাই শ্রাবণ, সবসময় খুনসুটিতে ব্যস্ত।

শ্রাবণের বন্ধু ছিল পলক।
পলক মাঝেমধ্যেই ওদের বাড়ি আসত।
স্মৃতি ছোট হলেও ওর মনে একটা নরম অনুভূতি জন্ম নিচ্ছিল পলকের জন্য।

পলকের নিজের পরিবারে সবসময় ঝগড়া হতো।
তাই যখন সে শ্রাবণের বাড়ি আসত, ওদের পারিবারিক ভালোবাসা দেখে এক ধরনের শান্তি পেত।

পলক তখন ভার্সিটিতে পড়ে।
আর স্মৃতি? একটা ছোট্ট মেয়ে, মনের ভেতর প্রথম ভালো লাগার অনুভব বয়ে নিয়ে চলেছে।

কিন্তু একসময় পলক বিদেশে চলে যায় পড়াশোনার জন্য।

স্মৃতি বুঝে গেল— এই ভালো লাগা এখন ভালোবাসায় পরিণত হচ্ছে।
সে ঠিক করল, পলক দেশে ফিরলে, ওসব বলবে।


ফিরে আসা…

সময় গড়াল।
স্মৃতি SSC দিল।
হঠাৎ একদিন শ্রাবণের ফোনে কল এলো।

ওপাশ থেকে ভেসে এল পরিচিত কণ্ঠ—
"দোস্ত, আমি দেশে ফিরছি।"

স্মৃতি চুপ করে শুনল।
তারপর হালকা কাশল।

ওপাশ থেকে পলক বলল,
"সোনা, তুমি?"
এই ডাক শুধু পলকই দিত।

স্মৃতির গলা আটকে গেল। কিছু বলল না।


অবশেষে দেখা...

পলক দেশে আসার তিনদিন পর, হঠাৎ খবর এলো—
তার দাদা খুব অসুস্থ। তাকে অন্য শহরে যেতে হবে।

স্মৃতি মন খারাপ করে থাকল।
পলক চলে গেল।
এক মাস কেটে গেল, সে আর ফিরল না।

স্মৃতি আর সহ্য করতে পারল না।
এক সকালে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল পলকের শহরের দিকে।

সেখানে পৌঁছে ফোন করল—
পলক তো অবাক!
সে দৌড়ে এল।

স্মৃতি কোনো কথা না বলে পলককে জড়িয়ে ধরল।

"Miss you so much…"
"Miss you too, সোনা…" পলকও বলে উঠল।

কিন্তু পরক্ষণেই পলক বলল,
"তুমি এখনো ছোট। এই সমাজ, এই নিয়ম… আমি শ্রাবণ আর তোমার মায়ের বিশ্বাস ভাঙতে পারব না।"

স্মৃতি বলল,
"তুমি পাশে থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না।"

পলক কিছু বলতে পারল না।
সে হেরে গেল সৃতির ভালোবাসার কাছে।

"চলো, আগে তোমায় বাড়ি পৌঁছে দিই।
তারপর একদিন তোমার মা আর শ্রাবণের সঙ্গে কথা বলব।"


একটি নীরব রাত...

স্মৃতিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে পলক ফিরে গেল নিজের জায়গায়।

কিন্তু সারা রাত ঘুম আসেনি।

স্মৃতির কথা, সেই কান্না, সেই আলিঙ্গন— সব ঘুরে ফিরে আসছে।

নিজের ভেতর দ্বন্দ্বে জ্বলছে পলক।

সে জানে, ভালোবাসা এত সহজে ভুলে যাওয়া যায় না।
সে জানে, সৃতি শুধু ছোট্ট একটা মেয়ে না—
একজন মেয়ে, যে নিজের ভালোবাসার জন্য লড়ছে।


শেষ প্রশ্ন...

রাত গভীর।
পলক জানালার পাশে বসে চোখ বন্ধ করে বলল,

"সোনা… আমি কি তোমায় হারিয়ে ফেলছি?"


👉 তুমি কী ভাবো?
পলক কি পরদিন সৃতির বাড়ি গিয়ে সাহস করে কথা বলবে?
নাকি এই ভালোবাসা আবারও থেমে যাবে সমাজের সামনে?

কমেন্টে জানাও —
ভালোবাসা কি সব বাধা জয় করতে পারে?

Comments

Popular posts from this blog

ছায়ার কলম

তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি 3