"তোমায় ছুঁয়ে থাকা স্মৃতি" 2
পলকের দাদার এক ছেলে আর এক মেয়ে। পলকের বাবা ও তার এক বোনও আছেন। সেই বোনের একটি মেয়ে আছে, নাম তুনি। পলকের ফুপির ইচ্ছা—তুনি আর পলকের বিয়ে হোক।
কিন্তু পলক সেটা চায় না। সে চায় না শুধু ফ্যামিলির চাপেই জীবন কাটাতে। তাছাড়া, সে তো কারও জন্য মন উজাড় করে দিয়েছে।
পলক এখন তাদের পরিবারে একজন দায়িত্ববান মানুষ। সবাই তাকে সম্মান করে, তার কথার গুরুত্বও অনেক বেশি।
একদিন পলক তার দাদাকে বলল,
"আমি একজন মেয়েকে অনেক ভালোবাসি।"
তার দাদা একটু চমকে উঠলেও মুচকি হেসে বললেন,
"আলহামদুলিল্লাহ! ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটাই প্রাধান্য পাবে।"
পলক তখন নিজের ফোন বের করে সৃতির একটা ছবি দেখাল দাদাকে।
ছবিটা দেখে দাদা অবাক হয়ে বললেন,
"এ যেনো পরির মতো দেখতে! তোমার সঙ্গে খুব মানাবে।"
পলক হেসে বলল,
"আমি আগামীকাল ওর বাসায় যাবো, কথা বলবো ওর পরিবারে। আমি সৃতি কে পুরোপুরি আমার জীবনের অংশ করতে চাই।"
দাদা বললেন,
"তাহলে এখনই যাও রেস্ট নাও, কাল তোমার বিশেষ দিন।"
রুমে ফিরে পলক আর অপেক্ষা করতে পারল না।
সে সঙ্গে সঙ্গে সৃতিকে কল দিল।
কল রিসিভ হতেই বলল:
"সোনা, আমি আসছি। আগামীকাল তোমার বাসায় যাবো… তোমায় আমার করে নিতে। চিরদিনের জন্য।"
সৃতি স্তব্ধ হয়ে গেল কিছু মুহূর্তের জন্য। তারপর চোখের জল আটকাতে না পেরে বলল,
"আমি তো আজীবন তোমারই ছিলাম… এখন শুনছি, তুমি আমার হতে আসছো… এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন!"
রের দিন সকাল থেকেই সৃতি সাজগোজ করে অপেক্ষা করছে।
তার মনটা আজ যেন একটু অন্যরকম—আশা, উত্তেজনা আর ভয় মিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভব।
"আজ পলক আসবে... আজ ওর মুখোমুখি বসে সব বলবে… আজ আমার জীবনের নতুন শুরু,"
ভাবতে ভাবতেই বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে।
সকাল গড়িয়ে যায়…
দুপুর হয়,
দুপুর থেকে বিকেল…
বিকেলটা কেমন যেন ভারী হয়ে আসে।
পাখির ডাক, হাওয়ার শব্দ, সবার হাসি-কান্না—সব শুনতে পাচ্ছে সৃতি,
কিন্তু তার মন যেন নিঃশব্দ।
"পলক এখনো এলো না…"
সন্ধ্যা নেমে আসে। চারপাশে আলো জ্বলে উঠেছে।
আকাশে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।
সৃতির মনেও যেন এক রকম অন্ধকার।
রাত গড়িয়ে যাচ্ছে,
কিন্তু পলকের কোনো খবর নেই।
সৃতি ভাবছে,
"কি এমন হলো? ও তো নিজে বলেছিল আসবে! তাহলে আসছে না কেন? কোথায় পলক?"
তার চোখে জল এসে গেল…
হাতের ফোনটা অনেকবার দেখেছে, বারবার রিং টোন চেক করেছে…
কিন্তু ফোন একটাও বাজেনি।
সৃতি আজ বুঝে গেল—সব সময় অপেক্ষার শেষ মানেই দেখা নয়… কখনো কখনো, তা হয় এক নতুন কষ্টের শুরু।
স্রাবণের ফোনে এসেছিল ছোট্ট একটা মেসেজ —
“ভাই, জরুরি—আমার হয়ে সৃতিকে শক্ত থাকতে বল। আমি আসছিলাম... কিন্তু...”
মেসেজটা সেখানেই শেষ।
এরপর… ফোন বন্ধ।
একবার, দুইবার… বারবার ট্রাই করেও ফোন বন্ধ।
সবাই আতঙ্কে।
স্রাবণ, বাবা, মা, এমনকি পলকের দাদা—
পলককে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।
✔️ হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নেওয়া হয়।
✔️ পলকের পরিচিত বন্ধুদের ফোন করা হয়।
✔️ পুলিশের কাছে তথ্য নেওয়া হয়…
কিন্তু না — পলকের কোনো খোঁজ মেলে না।
দিন যায়,
একদিন…
দুইদিন…
তিনদিন…
সপ্তাহ কেটে যায়।
সৃতি এখন নিজের ঘরের জানালা খুলে রাখে না।
যে পথ দিয়ে পলক আসার কথা ছিল, সেই পথের দিকে আর তাকায় না।
কেবল রাত হলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে, চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বলে—
“তুমি কথা দিয়েছিলে… ফিরে আসবে।
তুমি শুধু আমার হবে বলেছিলে।
তুমি কি ভুলে গেলে সোনা?”
সৃতি কিছু খায় না ঠিকমতো, কারো সাথে কথা বলে না।
সে শুধু প্রতিদিন একটা কাজ করে—
📱 নিজের ফোন খুলে রাখে…
পলকের নম্বর সেভ করা আছে ‘Sona’ নামে…
আর অপেক্ষা করে—একটা কল, একটা মেসেজ, একবারের দেখা।
কিন্তু… পলক আর ফিরে আসে না।
সময় থেমে যায়নি,
কিন্তু সৃতির জীবনে সবকিছু যেন থেমে গেছে।
কিছু মাস কেটে গেছে পলকের কোনো খবর ছাড়া।
পলকের মেসেজ, কল—সব এখন শুধু অতীত।
সৃতি এখন আর আগের মতো নেই।
সে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে,
বাহিরে বের হয় না, কারো সাথে কথা বলে না।
👗 আগের সেই রঙিন জামাগুলো এখন আলমারিতেই পড়ে থাকে।
তার চোখে কাজল নেই, মুখে হাসি নেই…
শুধু একটা ফাঁকা চাহনি,
আর বুকের ভেতর তীব্র অপেক্ষা।
সৃতি নিজের রুমেই নিজেকে আটকে রেখেছে।
দিন-রাত এক হয়ে গেছে তার কাছে।
স্রাবণ অনেকবার চেষ্টা করেছে সৃতিকে স্বাভাবিক করতে,
কিন্তু যখন সে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে সৃতি চুপ করে বসে আছে,
তার চোখের কোণে জল জমে যায়।
স্রাবণ মনে মনে ভাবে—
"ভাই, তুই কোথায় গেলি? আমার বোনকে এমন করে গেলি ক্যানো?"
🕯️ মা সৃতি’র পছন্দের খাবার রান্না করেন প্রতিদিন,
তবু থালা আগের মতোই থেকে যায়।
সৃতি শুধু জানালার পাশে বসে থাকে…
যেদিন পলক আসার কথা ছিল, সেই পথের দিকে তাকিয়ে।
একটা প্রশ্ন…
একটা অপেক্ষা…
একটা নাম…
“পলক…”
পলক চলে যাওয়ার পর, সৃতি যেন বেঁচে থেকেও মরে গিয়েছিল।
খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে, সব বন্ধ করে ঘরের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল।
কিন্তু স্রাবণ আর চুপ করে থাকতে পারেনি।
একদিন রাতে স্রাবণ মায়ের সঙ্গে কথা বলে—
“মা, আমরা সৃতিকে এভাবে হারাতে পারি না।
ওর ভেতরে অনেক সম্ভাবনা আছে।
ওকে দেশের বাইরে ভালো জায়গায় পড়তে পাঠাই।”
মা প্রথমে দ্বিধা করলেও রাজি হন।
🛫 কিছুদিনের মধ্যেই সৃতির পড়াশোনার সব কাগজপত্র তৈরি হয়।
ভিসা, পাসপোর্ট, ভর্তি—সবকিছু ঠিকঠাক হয়।
সৃতি প্রথমে যেতে চায়নি।
সে কেবল বলেছিল—
“যদি ও (পলক) ফিরে আসে?”
তখন স্রাবণ তার কাঁধে হাত রেখে বলেছিল—
“জীবন থেমে থাকে না বোন।
তুই শুধু কারো জন্য অপেক্ষা করতে করতে নিজের জীবন নষ্ট করবি না।
তুই স্বপ্ন দেখ, নিজেকে তৈরি কর।
যদি তোর ভালোবাসা সত্যি হয়, সে একদিন ঠিক ফিরে আসবে।”
🌸 সৃতির চোখে জল ছিল…
কিন্তু এবার তার চোখে ছিল ভবিষ্যতের আশার ঝিলিকও।
অবশেষে এক সকালে, বিমানের জানালায় বসে সৃতি একবার পেছনে তাকায়…
আর নিজেকে বলে—
“আমি তোমার জন্য আজ নিজেকে হারাতে নয়, তৈরি করতে যাচ্ছি।”
(ভালোবাসার অপেক্ষা থেকে পরিবারে শূন্যতা)
স্রাবণ আর মায়ের চেষ্টায়,
সৃতি এখন দেশের বাইরে— নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যস্ত।
কিন্তু তার চলে যাওয়ার পর…
ঘরের প্রতিটা দেয়ালে যেন সৃতির স্মৃতি লেগে রইল।
👵 মা চুপচাপ তার রুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন,
স্রাবণ তার পুরনো খোপায় বসে মাঝেমধ্যে বলেই ফেলে—
"ও থাকলে এতক্ষণে হয়তো খুনসুটি করত..."
সবার মুখে যেন হাসি হারিয়ে গেছে।
খাবার টেবিলে এক প্লেট খাবার বাড়তি রাখা হয়,
কিন্তু কেউ তা স্পর্শ করে না।
স্রাবণ জানে — সৃতিকে দূরে পাঠানোই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।
কিন্তু তার মনে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়…
“ভালোবাসা একরকম দূরত্বের যুদ্ধ…
আর এই যুদ্ধে সৃতি একা লড়ছে।”
📱 বিদেশ থেকে সৃতি মাঝে মাঝে ফোন করে।
তার গলায় কষ্ট লুকানো হাসি শোনা যায়—
“ভাই, সব ঠিক আছে, কিন্তু তোদের ভীষণ মিস করি।”
সবাই বুঝে,
সে হাসলেও, তার অন্তরটা আজও কারো জন্য অপেক্ষা করে।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো শান্তভাবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন, সৃতির ফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল এলো। প্রথম তিনবার সে কলটি ধরেনি। তবে চতুর্থবার বেজে উঠতেই সে ফোনটা ধরল।
ওপাশ থেকে এক নারীকণ্ঠ ভেসে এল,
— "তুমি কি আমার খোকার সোনা বলছো?"
কথাটা শুনেই সৃতির চোখে জল এসে গেলো। ঠোঁট কাঁপতে লাগল, কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল,
— "আসসালামু আলাইকুম... আপনি কে?"
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
— "আমি পলকের দাদা। আমার হয়তো হাতে আর বেশি সময় নেই, খুকি। আমার শেষ ইচ্ছা, তোমায় একবার চোখের সামনে দেখার। আমি তোমার ছবি দেখেছি, কিন্তু সামনে থেকে আমার খোকার পছন্দটাকে একবার দেখতে চাই। তুমি কি আসবে? কদিনের জন্য আমার কাছে আসবে?"
সৃতি চুপ করে রইলো। কোনো কথা বলল না। এরপর ধীরে ধীরে ফোনটা কেটে দিল।
পরদিন সকালে, কাউকে কিছু না জানিয়ে সে দাদার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে রওনা দিল। সারাদিনের জার্নির পর সে পৌঁছালো পলকের দাদার বাড়ি। দরজায় পা রাখতেই এক অচেনা গন্ধে মনটা ভার হয়ে উঠল। মনে হলো, যেন পলকের ছায়া তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল সৃতি। দাদা হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন। সৃতিকে দেখেই বললেন,
— "খোকার সোনা, কাছে আয়।"
সৃতি কাছে গিয়ে সালাম দিল। দাদা হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন আর বললেন,
— "আমার খোকার পছন্দ যে এতটা পরির মতো হবে, তা কল্পনাও করিনি। আল্লাহ তোমার মায়ায় নজর দিও না। যাও মা, একটু রেস্ট নাও।"
দাদার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল পলকের ফুফু, তাঁর জামাই আর মেয়ে। তারা এমনভাবে তাকিয়ে ছিল, যেন সৃতিকে চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে।
সৃতি কিছু বলল না। দাদা যখন হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, তখন সৃতি ধীর গলায় বলে উঠল,
— "আমি থাকবো। তবে একটা শর্তে—যেখানে পলক থাকতো, আমি সেই ঘরেই থাকবো।"
দাদা শুধু বললেন,
— "মা, তুমি যেখানে খুশি, সেখানে থাকো।"
তুলিকে নির্দেশ দিলেন,
— "তুমি ওকে নিয়ে যাও পলকের ঘরে।"
তুলি সামনে চলছিল, সৃতি পেছনে। হঠাৎ তুলি মুখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করলো,
— "তোমার কাছে পলকের কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লাগতো?"
সৃতি কিছু বলল না। চুপচাপ হাঁটতে থাকলো।
তুলি আবার জিজ্ঞেস করলো,
— "বলো না।"
সৃতি ধীরে বলল,
— "পলকের চোখ… ওই চোখের নেশায় আমি কতো বছর ধরে ডুবে আছি, জানো না তুমি। আমি সারাজীবন কেটে দিতে পারি ওই চোখের ঘোরে।"
তখন হঠাৎ তুলি ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— "একজন মৃত মানুষের জন্য এত কিছু!"
সৃতি থমকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
— "তুমি কী বললে?"
তুলি তড়িঘড়ি করে বললো,
— "না না… কিছু না। তোমার মনে হয় ভুল শুনেছো। যাও, পলকের ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও।"
তুলি চলে গেল। সৃতি তখন অদ্ভুত চিন্তায় পড়ে গেল।
"তুলি কী বললো? সবাই তো জানে পলক নিখোঁজ… কিন্তু সে কি… মৃত? তাহলে ও কীভাবে বললো ‘মৃত মানুষ’?"
একটা অজানা ভয় তার হৃদয়ের গহীনে ঢুকে পড়লো। ধীরে ধীরে সে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই তার মনে হলো—এই ঘর যেন এখনো কেউ ব্যবহার করছে!
খাটের ওপর একটা ভেজা তোয়ালে পড়ে আছে। পাশে টেবিল, তার ওপর মোবাইল চার্জার, আর একটা সিগারেটের ছাই ভর্তি অ্যাশট্রে।
সৃতির মনে হলো, এখানে হয়তো কেউ থাকছে!
হঠাৎ তার চোখ গেল তোয়ালেটার দিকে। সেটা হাতে তুলে নিয়েই তার বুকটা কেঁপে উঠলো। এই তোয়ালেটাই তো সে দিয়েছিল পলককে, যেদিন তারা বর্ষায় ভিজেছিল… সেদিন পলক তার বাড়ি এসেছিল, ভিজে গিয়েছিল, আর সে নিজের প্রিয় তোয়ালেটা দিয়ে দিয়েছিল পলককে।
ঘ্রাণটা এখনও এক—একই পলকের ঘ্রাণ, ভালোবাসার ঘ্রাণ।
সৃতি খাটে বসে তোয়ালেটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
— "পলক… কোথায় তুমি? আমাদের গল্প কি শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেলো? আমি আর পারছি না… আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে… পলক… প্লিজ… তুমি এসো… আমাকে জড়িয়ে ধরো… একবার, শেষবার…"
অশ্রুজল মিশে গেলো তার হৃদয়ের কান্নায়। কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়লো, বুঝতেই পারল না।
ঘুমের ঘোরে হঠাৎ সৃতি অনুভব করলো, কেউ যেন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কোমল, মমতাময় স্পর্শ। তার মনে হলো, কারও চোখে জল, আর সেই জল ঝরে পড়ছে তার গালে।
চোখ খুলতেই সে দেখলো—কেউ নেই। পুরো ঘর নিঃস্তব্ধ।
কিন্তু তার চোখ গেল জানালার দিকে।
জানালা দিয়ে সে দেখলো—একটা কালো ছায়া ধীরে ধীরে বাড়ির পেছনের দিকের ঘন জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে…
শেষ? নাকি শুরু…?


Comments
Post a Comment